রিটার্ন বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: একটি বিস্তৃত গাইডলাইন

রিটার্ন কি

আয়কর কর্তৃপক্ষের নিকট একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় এবং সম্পদের তথ্যাবলী। নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে রিটার্ন। আয়কর আইন অনুযামী স্বাভাবিক ব্যাক্তি করদাতার রিটার্ন সকল প্রকার আয়ের বিবরণী, বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত সকল প্রকার পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী এবং, ক্ষেত্রমত, জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার ব্যয়ের বিবরণী সংবলিত হবে।

রিটার্নের প্রকারভেদ

পূর্বে স্বাভাবিক ব্যাক্তি করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের জন্য দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত ছিলো- সাধারণ পদ্ধতি ও সার্বজনীন স্বনির্ধারনী পদ্ধতি। বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যাক্তি করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের জন্য স্বনির্ধারনী পদ্ধতি রয়েছে। অন্যকোনভাবে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ নেই।

রিটার্ন কারা দাখিল করবেন

কারা রিটার্ন দাখিল করবেন তা দুই ভাগে  চিহ্নিত করা যায়, যথাঃ-

১. যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে; এবং

২. যাদেরকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

করযোগ্য আয়ের ভিত্তিতে যাদেরকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে

১. কোন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার (individual) আয় যদি বছরে ৩,৫০,০০০ টাকার বেশি হয়;

২. মহিলা এবং ৬৫ বছর বা  তদুর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে ৪,০০,০০০ টাকার বেশি হয়;

৩. তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক করদাতার আয় যদি বছরে ৪,৭৫,০০০ টাকার বেশি হয়;

৪. গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে ৫,০০,০০০ টাকার বেশি হয়।

আর্থিক কর্মকান্ড ও সেবা গ্রহনে যাদেরকে আবশ্যিকভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হবেঃ

০১. করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম করলে;

০২. আয়বর্ষের পূর্ববতী তিন বছরের যেকোনো বছর করদাতার কর নির্ধারণ হয়ে থাকে বা তার আয় করযোগ্য হয়ে থাকে;

০৩. ফার্মের অংশীদার হলে;

০৪. কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার কর্মচারী হলে;

০৫. গণকর্মচারী হলে;

০৬. কোন ব্যবসায় বা পেশায় যেকোন নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হলে;

০৭. কর অব্যাহতি প্রাপ্ত বা হাসকৃত হারে করযোগ্য আয় থাকলে;

০৮. করারোপযোগ্য আয় না থাকা সাপেক্ষে, ২০ (বিশ) লক্ষাধিক টাকার ঋণ গ্রহণে;

০৯. আমদানি নিবন্ধন সনদ বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তিতে ও বহাল রাখতে;

১০. সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেল প্রাপ্তির জন্য ও নবায়নের জনা;

১১. সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তিতে;

১২. সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হতে এবং লাইসেন প্রাপ্তিতে ও নবায়ন করতে;

১৩. সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০ (দশ) লক্ষাধিক টাকার জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় বা লিজ বা হস্তান্তর বা বায়নানামা বা আমমোক্তারনামা নিবন্ধন করতে;

১৪. ক্রেডিট কার্ড প্রাপ্তিতে ও বহাল রাখতে;

১৫. চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসাবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসাবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ও বহাল রাখতে;

১৬. Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act 1974 (Act No. LII of 1974) এর অধীন নিকাহ্ রেজিস্ট্রার, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ২০১২ (২০১২ সনের ৪০ নং আইন) এর অধীন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক ও Special Marriage Act 1872 (Act No. III of 1872) এর অধীন রেজিস্টার হিসাবে লাইসেন্স প্রাপ্তি বা ক্ষেত্রমত, নিয়োগপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বহাল রাখতে;

১৭. ট্রেডবডি বা পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

১৮. ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রাপ্তি ও নবায়নে;

১৯. যেকোনো এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তি এবং বহাল রাখতে;

২০. লঞ্চ, স্টিমার, মাছ ধরার ট্রলার, কার্গো, কোস্টার, কার্গো ও ডাম্ব বার্জসহ যেকোনো প্রকারের ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেট প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

২১. পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হইতে ইট উৎপাদনের অনুমতি প্রাপ্তি ও নবায়নে;

২২. সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু বা পোষ্য ভর্তিতে;

২৩. সিটি কর্পোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি বা বহাল রাখতে;

২৪. কোম্পানির এজেন্সী বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

২৫. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

২৬. আমদানির উদ্দেশে ঋণপত্র খোলায়;

২৭. ৫ (পাঁচ) লক্ষাধিক টাকার পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলাইয়;

২৮. ১০ (দশ) লক্ষাধিক টাকার মেয়াদী আমানত খোলায় ও বহাল রাখতে;

২৯. ৫ (পাঁচ) লক্ষাধিক টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে;

৩০. পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে;

৩১. মোটরযান, স্পেস বা স্থান, বাসস্থান অথবা অনান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারড ইকোনমিক এক্টিভিটিজে অংশগ্রহণ করতে;

৩২. ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক বা উৎপাদন কার্যক্রমের তত্তাবধানকারী পদমর্যাদায় কর্মরত ব্যাক্তির বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে;

৩৩. মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে;

৩৪. অ্যাডভাইজরি বা কন্সাল্টেন্সি সার্ভিস, ক্যাটারিং সার্ভিস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, জনবল সরবরাহ, নিরাপত্তা সরবরাহ সেবা বাবদ নিবাসী কর্তৃক কোনো কোম্পানি হইতে কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে;

৩৫. Monthly Payment Order বা এমপিও ভুক্তির মাধ্যমে সরকারের নিকট হইতে মাসিক ১৬ (ষোল) হাজার টাকার ঊর্ধ্বে কোনো অর্থপ্রাপ্তিতে;

৩৬. বিমা কোম্পানির এজেন্সী সার্টিফিকেট নিবন্ধন বা নবায়নে;

৩৭. দি-চক্র বা ত্রি-চক্র মোটরযান ব্যতীত অন্যান্য মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে;

৩৮. এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিও বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি হইতে লাইসেলপ্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার অনুকূলে বিদেশি অনুদানর অর্থ ছাড় করতে;

৩৯. বাংলাদেশে অবস্থিত ভোক্তাদের নিকট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করিয়া পণ্য বা সেবা বিক্রয়ে;

৪০. কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) এবং Societies Registration Act, 1860 (Act No. XXI of 1860) এর অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ লাভের আবেদনের খেত্রে;

৪১. পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা সরবরাহের উদ্দেশ্যে নিবাসী কর্তৃক টেন্ডার ডকুমেন্টস্‌ দাখিলকালে;

৪২. কোনো কোম্পানি বা ফার্ম কর্তৃক কোনো প্রকার পণ্য বা সেবা সরবরাহ গ্রহণকালে;

৪৩. পণ্য আমদানি বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিলকালে;

৪৪ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা, সময় সময়, সরকার কর্তৃক গঠিত অনুরূপ কর্তৃপক্ষ অথবা সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুমোদনের নিমিত্ত ভবন নির্মাণের নকশা দাখিলকালে;

৪৫. স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসাবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি করতে এবং বহাল রাখতে;

৪৬. ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, মাইক্রোক্রডিট অরগানাইজেশন, সোসাইটি এবং সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে এবং চালু রাখতে;

৪৭. কোনো নিদিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ গ্রহণকালে বাড়ির মালিকের;

৪৮. কোনো নিদিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক পণ্য বা সেবা সরবরাহ গ্রহণকালে সরবরাহকারীর বা সেবা প্রদানকারীর।

করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল

স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাকে করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে আয়কর আইনের ধারা ১৭৩ মোতাবেক কর পরিশোধ করতে হবে।

করদিবস পরবর্তীকালে রিটার্ন দাখিল

করদিবস পরবর্তীকালে রিটার্ন দাখিল করা যাবে কি? হ্যাঁ। যাবে। এক্ষেত্রে আয়কর আইনের ধারা ১৭৪ মোতাবেক কর পরিশোধ করতে হবে।

রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি

স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাগণ করদিবসের মধ্যে বা করদিবস পরবর্তীকালে যখনই রিটার্ন দাখিল করুন না কেন স্বনির্ধারনী পদ্ধতিতে দাখিল করতে হবে। সাধারণ পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ নেই।

করদিবস  পরবর্তীকালে স্বনির্ধারনী প্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করা যাবে কি?

হ্যাঁ। করদিবস পরবর্তীকালে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাগণ স্বনির্ধারনী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করবেন। অন্য কোন পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ নেই।

করদিবস কি?

করদাতা কর্তৃক রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ হলো করদিবস। করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে কোনো প্রকার জরিমানা বা অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হয় না। আয়কর আইন অনুযায়ী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের জন্য প্রতি বছরের ৩০ নভেম্বর করদিবস। ২০২৩-২০২৪ করবর্ষর জন্য ৩০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ হচ্ছে করদিবস, অর্থাৎ কোনো প্রকার জরিমানা বা অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ ব্যতীত রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ। একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা ১ জুলাই ২০২৩ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের মধ্যে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করবেন।

এছাড়াও, নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে ভিন্ন ভিন্ন করদিবস রয়েছে, যেমন-

(ক) কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা যিনি পূর্বে কখনোই রিটার্ন দাখিল করেননি তার জন্য ২০২৩-২০২৪ করবর্ষের করদিবস ২০২৪ সনের ৩০ জুন;

(খ) বিদেশে অবস্থানরত কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে, তার বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের দিন হতে ৯০ (নব্বই) তম দিন, যদি উক্তরুপ ব্যক্তি –

(অ) উচ্চ শিক্ষার জন্য ছুটিতে অথবা চাকরির জন্য প্রেষণে বা লিয়েনে নিযুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থান করেন; বা

(আ) অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে বৈধ ভিসা এবং পারমিটধারী হয়ে বাংলাদেশে বাহিরে অবস্থান করেন;

করদিবসে তারিখ যেক্ষেত্রে সরকারি দুটির দিন সেক্ষেত্রে উক্ত দিনের অব্যবহিত পরবতী কর্মদিবস।

রিটার্ন কোথায় দাখিল করতে হয়

টিাআইএন সনদে উল্লিখিত বা সার্কেল অনুষায়ী রিটার্ন দাখিল করতে হবে। রিটার্ন দাখিলের সময় করদাতা বিদেশে অবস্থায় করলে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও রিটার্ন দাখিল করা যায়। এছাড়াও করদাতাগণ অনলাইনে https://etaxnbr.gov.bd এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

তবে, রিটার্ন প্রস্তুতকারীগণকে আবশ্যিকভাবে https://etaxnbr.gov.bd এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে করদাতাদের রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

রিটার্ন দাখিল না করলে কি হয়

যে সকল ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, রিটার্ন দাখিল না করলে সে সকল সেবা হবে বঞ্চিত হতে হবে। যেমন- গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাবে না কিংবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে, বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে অসুবিধা হবে ইত্যাদি।

এছাড়াও নিম্নবর্ণিত বিষয়াদির মুখোমুখি হবার সম্ভবনা রয়েছে, যেমন-_

ক। আয়কর আইনের ধারা ২৬৬ অনুযায়ী উপকর কমিশনার কর্তৃক আরোপিত জরিমানা পরিশোধ করা।

খ। উপকর কমিশনার কর্তৃক একতরফাভাবে নির্ধারিত কর পরিশোধ করা।

রিটার্নের সাথে যেসব প্রমাণাদি! তথ্য দলিলাদি দাখিল করতে হবে

রিটার্নের সাথে বিভিন্ন উৎসের আয়ের স্বপক্ষে যে সকল প্রমাণাদি/ বিবরণ দাখিল করতে হবে তার একটি তালিকা নীচে দেয়া হলো (তালিকাটি আংশিক):

(ক) চাকরি হতে আয়

(অ) বেতন বিবরণী;

(আ) ব্যাংক হিসাব থাকলে কিংবা ব্যাংক সুদ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী বা ব্যাংক সার্টিফিকেট;

(ই) বিনিয়োগ রেয়াত দাবী থাকলে তার স্বপক্ষে প্রমাণাদি। যেমন, জীবন বীমার পলিসি থাকলে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রমাণ।

(খ) ভাড়া হতে আয়

(অ) বাড়ী ভাড়ার সমর্থনে ভাড়ার চুক্তিনামা বা ভাড়ার রশিদের কপি, মাসভিত্তিক বাড়ী ভাড়া প্রাপ্তির বিবরণ এবং প্রাপ্ত বাড়ী ভাড়া জমা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব বিবরণী;

(আ) পৌর কর, সিটি কর্পোরেশন কর, ভুমি রাজস্ব প্রদানের সমর্থনে রশিদের কপি;

(ই) ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বাড়ী কেনা বা নির্মাণ করা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে ব্যাংক বিবরণী ও সার্টিফিকেট;

(ঈ) গৃহ-সম্পত্তি বীমাকৃত হলে বীমা প্রিমিয়ামের রশিদের কপি;

(উ) অন্যান্য ভাড়ার ক্ষেত্রে ভাড়ার প্রাপ্তি ও ব্যয়ের সমর্থনে দলিলাদি।

(গ) কৃষি হতে আয়

(অ) বর্গা বা ভাগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দলিলাদি;

(আ)  যেক্ষেত্রে করদাতা গ্রস প্রাপ্তির ৬০ শতাংশের অধিক খরচ দাবী করেন সেক্ষেত্রে উক্তরুপ দাবীর সমর্থনে প্রয়োজনীয় দলিলাদি।

(ঘ) ব্যবসা হতে আয়

ব্যবসা বা পেশার আয়-ব্যয়ের বিবরণী (Income statement) ও স্থিতিপত্র (Balance Sheet) এবং ব্যাংক বিবরনীসহ অনান্য প্রমাণকসমূহ।

(ঙ) মুলধনি আয়

(অ) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়/হস্তান্তর হলে তার দলিলের কপি;

(আ) উৎসে আয়কর জমা হলে তার চালানের ফটোকপি;

(ই) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন থেকে মুনাফা হলে এ সংক্রান্ত প্রতায়নপত্র।

(চ) আর্থিক পরিসম্পদ হতে আয়

(অ) সিকিউরিটিজ স্ক্রিপ্ট হলে তার ফটোকপি এবং স্ক্রিপ্টলেস হলে তার হিসাবের সমর্থনে বিবরণী;

(আ) সুদ আয় থাকলে সুদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন পত্র;

(ই) প্রাতিষ্ঠানিক খণ নিয়ে বন্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট/ব্যাংক বিবরণী বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রত্যয়নপত্র।

(ঈ) নগদ লভ্যাংশ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টের কপি বা সার্টিফিকেট;

(উ) সঞ্চয়পত্র হতে সুদ আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময বা সুদ প্রাপ্তির সময় নেয়া সার্টিফিকেটের কপি;

(ঊ) ব্যাংক সুদ আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী/সার্টিফিকেট;

(ছ) অন্যান্য উৎসের আয়ের খাত

আয়ের উৎসের সমর্থন প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র।

(জ) অংশীদারী ফার্মের আয়

ফার্মের আয়-ব্যয়ের বিবরণী (Income statement) ও স্থিতিপত্র (Balance Sheet).