নির্ধারিত কর দিবসে রিটার্ন দাখিলের ব্যর্থতায় আর্থিক প্রভাব কি কি হতে পারে?

রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতায় আর্থিক ক্ষতি কত হতে পারে?

যদি কোনো ব্যক্তিগত করদাতা কর দিবসের মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন তাহলে তার তিনটি বড় আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং এজন্য করদাতার করদায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর দিবস দুই মাস বাড়িয়ে ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ করেছিলো এবং কিছুদিন আগে এই নির্ধারিত দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী, করদাতাকে এখন থেকে আর সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করার প্রয়োজন নেই এবং করদাতা ঘে কোনো সময় ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে পারবেন কিন্তু তিনি কিছু ট্যাক্স সুবিধা হারাবেন।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে যে তিনটি প্রধান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন তা চলুন এবার জেনে নেই।

কর রেয়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন

বিনিয়োগ ভাতার উপর ট্যাক্স রিবেট সুবিধা প্রদান করা হয় ঘা একজন ব্যক্তি করদাতার কর দায় বহুলাংশে কমিয়ে খাকে। বিনিয়োগ ভাতার ১৫% বা করযোগ্য আয়ের ৩%: এই দুইটা অঙ্কের অর্থ ঘা ছোট হবে তাই একজন ব্যক্তি করদাতা কর রেয়াত হিসেবে দাবি করতে পারেন। তবে ব্যক্তি করদাতা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর রেয়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন। এখন যদি কোন করদাতা কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন তাহলে তিনি এই কর রেয়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

ধরুন, আপনার করযোগ্য আয় ৬.০০.০০০ টাকা এবং এই টাকার উপর কর রেয়াত হবে ১৮,০০০ টাকা

(৬.০০.০০০ টাকাX৩%)। কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থতার কারণে আপনি এই কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন না।

করমুক্ত সৃবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন

আয়কর আইন অনুসারে, এমন বেশ কয়েকটি আয় রয়েছে যা করমুক্ত সুবিধার অন্তভুক্ত। আবার কিছু অব্যাহতি বাদ দিয়ে আমরা করযোগ্য আয় বের করে থাকি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করার কারণে উপরিউক্ত সুবিধা থেকে করদাতা বঞ্চিত হবেন।

ধরুন, একজন বেতনভোগী ব্যক্তি মোট বেতন খাতে আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা ৪,৫০,০০০ টাকা; এই দুইটি অঙ্কের মধ্যে যে অঙ্কটি ছোট হবে তা তিনি বেতন খাতের আয় থেকে বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করবেন। এবং এই করযোগ্য আয়ের উপরই তিনি কর ধাপ অনুযায়ী করদায় নির্ণয় করবেন।

কিন্তু যেহেতু উক্ত বেতনভোগী করদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন নি তাই তিনি এই সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হবেন।

মোট করদায়ের উপর মাসিক ৪% সুদ প্রদান করতে হবে

গত বছর পর্যন্ত বিলম্ব সুদের হার ২% হলেও এ বছর থেকে মাসিক ভিত্তিতে তা হবে ৪%। এমনকি ভগ্নাংশ মাসের জন্যও সম্পূর্ণ এক মাসের জন্য বিলম্ব সুদ প্রদান করতে হবে। ধরুন, আপনি যদি ১৪ মার্চ ২০২৪-এ ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেন তাহলে আপনাকে দুই মাসের জন্য আপনার মোট করদায়ের উপর ৪% বিলম্ব সুদ দিতে হবে।

উপরন্তু, উৎসে বা অগ্রিম কর হিসাবে সরকারি কোষাগারে ইতোমধ্যে যে করের টাকা জমা দেওয়া হয়েছে তাও বাদ দেওয়া যাবে না। তার অর্থ হলো, আপনাকে সম্পূর্ণ করের উপর সুদ দিতে হবে। কিন্তু পূর্বে. করদাতা পরিশোধিত করের টাকা বাদ দিতে পারতেন কারণ তারা ইতোমধ্যেই সরকারি কোষাগারে তা পরিশোধ করেছেন।

একদিকে আপনি কর রেয়াত এবং কর অব্যাহতি সুবিধা হারাচ্ছেন: এবং অন্য দিকে আপনাকে উপরে আলোচিত সম্পূর্ণ করের উপর ৪% বিলম্ব সুদ দিতে হবে যা আপনার করদায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করবে।

রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতায় জরিমানা কত দিতে হবে?

এতক্ষণ ধরে উপরে আপনি জেনেছেন, কর দিবসের মধ্যে যদি রিটার্ন দাখিল করতে না পারেন এবং এ নির্ধারিত সময়ের পর রিটার্ন দাখিল করলে একজন করদাতা কোন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। আর এখন যেটা জানবেন তা হলো, একজন ব্যক্তির আয় আছে বা তার জন্য রিটার্ন দাখিল করা আয়কর আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক ছিল কিন্তু তিনি রিটার্ন দাখিল করা থেকে বিরত থেকেছেন। এমতাবস্থায় আয়কর কর্মকর্তা যদি তা অবগত হন, তাহলে সেক্ষেত্রে জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। এবং এই জরিমানা উপরে যে আর্থিক ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করেছি তার অতিরিক্ত।

তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, আয়কর আইন অনুযায়ী জরিমানা কত দিতে হবে?

জরিমানা কত দিতে হবে তা নির্ভর করবে করদাতা নতুন না পুরাতন তার উপর। ঘদি কোন ব্যক্তি পূর্বে কখনোই রিটার্ন দাখিল করে না থাকেন যদিও তার জন্য রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক ছিল সেক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা।

আর যদি কোন ব্যক্তি করদাতা ইতঃপূর্বে রিটার্ন দাখিল করেছিলেন তাহলে তার সর্বশেষ নিরূপিত আয়ের উপর প্রদেয় করের ৫০% বা ১,০০০ টাকা: এই দুইটি অস্কের মধ্যে ঘেটা বড় হবে তাই হবে তার জন্য জরিমানা।

তাহলে জরিমানা কীভাবে গণনা করা হবে?

যদি কোন ব্যক্তি যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হন তাহলে উপকর কমিশনার উক্ত ব্যক্তির সর্বশেষ নিরপিত আয়ের উপর ধার্যকৃত করের ১০% হারে জরিমানা আরোপ করতে পারবেন, তবে এই জরিমানা ১,০০০ টাকার কম হবে না। এবং যতোদিন তিনি রিটার্ন দাখিল থেকে বিরত থেকেছেন ততোদিন পর্যন্ত প্রতিদিনের জন্য আরো ৫০ টাকা করে অতিরিক্ত জরিমানা ধার্য হবে।

তাহলে আপনি জানলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে আর্থিক ক্ষতি এবং রিটার্ন দাখিল না করলে কী পরিমাণে জরিমানা দিতে হবে। তাই সব সময় চেষ্টা করুন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে এবং যদি আপনার রিটার্ন দাখিল করার জন্য উপযুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করুন।

রিটার্ন দাখিল সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শের জন্য ট্যাক্স ফাইল বিডি তে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনি খুব সহজেই তাদের সহায়তা নিয়ে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন ঘরে বসেই।